কোন কোন পাখি মানুষের মতো কথা বলতে পারে এ সম্পর্কে আমাদের অনেকের হালকা ধারণা থাকে তবে আপনি চেনেন কি পৃথিবীতে ছয়টি প্রজাতির পাখি মানুষের মতো কথা বলতে পারে। আজকের আলোচনায় আমরা মূলত এই সম্পর্কেই বিস্তারিত আলোচনা করবো। তাহলে আলোচনাটি শুরু করা যাক।
কোন কোন পাখি মানুষের মতো কথা বলতে পারে?
প্রকৃতিতে থাকা ছয়টি প্রজাতির পাখি মানুষের মত কথা বলতে পারে। আর এই ছয়টি প্রজাতির পাখির নাম হচ্ছেঃ
- তোতা
- কাকাতুয়া
- ময়না
- শালিক
- হামিংবার্ড ও
- ম্যাকাও
কোন পাখি গুলো মানুষের মত করে কথা বলতে পারে আমরা সেই পাখি গুলোর নাম জেনেছি। এখন নিচে এই পাখি গুলো সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানব।
তোতা
তোতা একটি জনপ্রিয় পাখি। পাখিটি সাধারণত গ্রীষ্ম মন্ডলী ও উপক্রান্তীয় অঞ্চলে দেখতে পাওয়া যায়। দক্ষিণ আমেরিকায় সব থেকে বড় বৈচিত্র দেখতে পাওয়া যায়। জেস, ম্যাগপি ও কাক সহ অন্য সব পাখিদের তুলনায় তোতা পাখি সব থেকে বুদ্ধিমান পাখিদের মধ্যে একটি। এই পাখিটি একমাত্র প্রাণী যা ত্রিপদীবাদ প্রদর্শন করে। তোতা পাখি মানুষের মতো কথা বলতে পারায় সবাই এই পাখিটি পালন করে থাকে।
কাকাতুয়া
কাকাতুয়া দেখতে টিয়া পাখির মতো এবং কাকাতুয়ার মাথায়ও খুব সুন্দর দেখতে একটি ঝুটি থাকে। পুরুষ কাকাতুয়া ও স্ত্রী কাকাতুয়া দেখতে হুবহু একই রকম হয়ে থাকে । কাকাতুয়া পাখিকে বাড়ির আভিজাত্যের প্রতীক হিসেবে ধরা হতো। কাকাতুয়ার ২টি বৈশিষ্ট্য হলো খুব সহজে পোষ মানানো ও কথা শেখানো যায় ও বিভিন্ন গাছের কোটরে এরা বাসা তৈরি করে। এরা পোকামাকড় ও ফলমূল খেয়ে জীবনধারণ করে থাকে। কাকাতুয়া সাধারণ ২টি ডিম দিয়ে থাকে।
ময়না
ময়না একটি মজার পাখি হিসেবে পরিচিত। ময়না বিভিন্ন ধরনের হয়ে থাকে সোনাকানি ময়না, পাতি ময়না ও পাহাড়ি ময়না ইত্যাদি। তবে পাতি ময়না কথা বলা ময়না হিসেবে পরিচিতি লাভ করে । শালিকে সাথে ময়না কে দেখতে কিছুটা মিল রয়েছে। পুরুষ ময়না ও স্ত্রীর ময়না দেখতে সাধারণত একই রকম হয়ে থাকে। ময়নার স্বরতন্ত্র জটিল প্রকৃতির বলে খুব সহজেই শব্দ অনুকরণ করতে পারে। কথা বলতে পারা পাখিদের মধ্যে ময়না পাখি অন্যতম।
শালিক
শালিক পাখি ক্ষেত খামারের পাখি হিসেবে পরিচিত। তবে এই পাখিটি ও খুব সুন্দর কথা বলতে পারে। শালিক পাখি সাধারণত লোকালয় ও ক্ষেত খামারে বেশি দেখতে পাওয়া যায়। এটা পোকামাকড় খেয়ে জীবনধারণ করে থাকে। গাছের খোড়লে ও দালানের ফোকরে এরা বাসা তৈরি করে থাকে। শালিক পাখি সাধারণত দুই থেকে নয় টি ডিম পেড়ে থাকে। বাংলাদেশে ১২ টি প্রজাতির শালিক দেখতে পাওয়া যায়।
হামিং বার্ড
হামিংবার্ড ফুলের মধু খাওয়ার জন্য জনপ্রিয়। তবে এরা পোকামাকড় খেয়েও জীবনধারণ করে থাকে । হামিং বার্ড সাধারণত ছোট পাখি তবে হামিংবার্ডের বড় প্রজাতি ২৩ সেমি যা দৈত্যাকার হামিং বার্ড নামে পরিচিত । হামিং বার্ড একাকী পাখি এবং তারা নিজেদের প্রজাতির পাখিদের মধ্যেও মিলিত হতে দেখা যায় না। পাখিটির লিঙ্গের পালকের রঙের ভিন্নতা দেখা যায়।
ম্যাকাও
তোতা পাখির বিভিন্ন প্রজাতির মধ্য ম্যাকাও পাখিটি খুব জনপ্রিয়। পাখিটির গায়ের রঙের জন্য মানুষের কাছে বেশ পরিচিত এবং পাখিটি দেখতে সুন্দর থাকায় যুগের পর যুগ মানুষ পোষা পাখি হিসেবে ব্যবহার করে থাকেন । ম্যাকাও পাখিটি দেখতে একটু বড় ধরনের ও এরা গড়ে ষাট বছর বছর পর্যন্ত বেঁচে থাকে।
পাখিটি পোষার জন্য অতিরিক্ত যত্নের প্রয়োজন হয়ে থাকে। ম্যাকাও পাখিটির একটি ব্যতিক্রমী বৈশিষ্ট্য হলো কোন ম্যাকাও পাখির গাঁয়ের পালকের রঙ এর প্যাটার্ন একই হয় না।
পাখিরা কীভাবে কথা বলে?
পাখিদের গলায় ভোকাল কর্ড নেই আছে সিরিঙ্কস।সিরিঙ্কস হলো পাখির শরীরে y আকৃতির এক ধরনের বিশেষ অঙ্গ ।পাখির ফুসফুস ও শ্বাসনালির মধ্যে সিরিঙ্কস এর অবস্থান। পাখি যখন শ্বাস-প্রশ্বাস নেয় তখন বাতাস শ্বাসনালির ভিতর দিয়ে সিরিঙ্কসের মধু দিয়ে ফুসফুসে পৌঁছায় এবং সিরিঙ্কস কাপে । সিরিঙ্কস কাঁপলে শব্দ তৈরি হয় । এর ফলে পাখিরা কথা বলতে পারে ও ঠোঁট না নাড়িয়ে গান করতে পারে।
কিছু পাখি অন্যদের তুলনায় কেন ভালো কথা বলতে পারে?
পাখিদের কথা বলার ক্ষমতা বিভিন্ন রকমের হয়ে থাকে এবং কিছু বাক্য ও শব্দ অনুরোধ করণ করতে সক্ষম হয় । কিছু কিছু পাখি সিরিঙ্কস ভালো থাকার কারণে বিভিন্ন ধরনের শব্দ উচ্চারণ করতে পারে । আবার কিছু কিছু পাখির সিরিঙ্কস মোটামুটি ভালো থাকার কারণে সকল ধরনের শব্দ উচ্চারণ করতে পারে না।
তাই দেখা যায় ময়না পাখি সকল শব্দ উচ্চারণ করতে পারে তা কাকাতুয়া পাখির শব্দ উচ্চারণের সাথে সামঞ্জস্য থাকে না। আবার দেখা যায় পাখির সিরিঙ্কস এর ভিতর বাতাস কম যায় এবং কম কম্পন সৃষ্টি করে ফলে তেমন একটি ভালো কথা বলতে পারে না। সুতরাং যেসব পাখির সিরিঙ্কস এ সুন্দরভাবে কম্পন তৈরি হয় সেসব পাখি অন্য সব পাখিদের তুলনায় কথা বলতে পারে ।
পাখিরা কেন কথা বলে ?
পাখিরা তার মনের ভাব প্রকাশের জন্য কথা বলে। এবং মানুষের শিখানো শব্দগুলো ব্যবহার করে থাকে ।
পাখি কথা বলে অন্য প্রাণী কথা বলে না কেন?
আমাদের মাথায় একটি কথা ঘুরে থাকে সেটি হল পাখি কথা বলে কিন্তু অন্য প্রাণী কথা বলতে পারে না কেন। চলুন জেনে আসি পাখি কথা বলে কিন্তু অন্য প্রাণী কথা বলে না কেন ।
পশু পাখিদের নিজস্ব ভাষা রয়েছে এবং তারা নিজেদের ভাষায় একে অপরের সাথে মনের ভাব প্রকাশ করে। আমরা সাধারণত এক এক প্রাণীর এক এক রকমের ডাক শুনি । আর এই ডাকই হচ্ছে তাদের ভাব বিনিময়ের বা ভাব প্রকাশের মাধ্যম।
মানুষের মত পাখিদের অতটা শব্দ ধারণ করার মত ক্ষমতা নেই। মানুষের মুখে বারবার একটি শব্দ শুনে পাখিরা সেই শব্দটি মুখস্ত করে উচ্চারণ করতে পারে। কিন্তু সেই সব শব্দ গুলির অর্থ তারা বুঝতে পারে না। আর অন্য প্রাণী দের পাখিদের মতো ধারণ ক্ষমতা নেই তাই পাখিরা কথা বলে অন্য প্রাণী কথা বলে না।
কোন ম্যাকাও সবচেয়ে ভালো কথা বলে?
ম্যাকাও সাধারণত ১৯ ধরনের হয়ে থাকে তবে বিলুপ্ত হয়ে ছয় ধরনের ম্যাকাও দেখতে পাওয়া যায়। যেসব ম্যাকাও সবচেয়ে ভালো কথা বলতে পারে সেগুলো হলো কিউ বান ম্যাকাও, নীল সোনালী ম্যাকাও এবং লাল সবুজ ম্যাকাও ।
নতুনদের জন্য কোন পাখি ভালো?
সকল পাখি কথা বলতে কিছুটা সময় নেয় তবে নতুনদের কষ্ট কম হওয়ার জন্য যে সকল পাখি পালন করতে পারেন সেসব পাখি হলো শালিক , ময়না ও ম্যাকাও । তবে ম্যাকাও পাখি পালন করার জন্য অতিরিক্ত যত্নের প্রয়োজন ।
শালিক পাখির জন্য অতিরিক্ত যত্নের প্রয়োজন হয় না এবং আপনার কথা শুনলে কিছুদিনের ভিতর কথা শিখতে পারে। আর যদি দ্রুত পোষ মানা ও কথা বলতে পারবে এমন পাখি চান তাহলে টিয়া ময়না তোতা পছন্দ করতে পারেন ।
কোন পাখি কথা বলতে শিখানো সবচেয়ে সহজ?
যে সকল পাখি কথা বলতে শিখানো সবচেয়ে সহজ নিম্নে সেই সকল পাখি নিয়ে আলোচনা করা হলো।
দ্রুত পোষ মানা ও কথা বলা পারা পাখি হলো টিয়া ময়না তোতা শালিক ইত্যাদি । এই সকল পাখিদের তেমন একটা কথা বলা শিখানোর জন্য সময় প্রয়োজন হয় না। এরা সহজেই কথা বলা শিখতে পারে। সকল পাখিদের তুলনায় টিয়া ময়না তোতা শালিক পাখিগুলো একটু আলাদা রকমের হয়ে থাকে। তাই এই পাখিগুলো খুব সহজেই কথা বলতে শেখানো সম্ভব হয়।
আরও পড়ুনঃ একটি পূর্ণবয়স্ক কবুতর কি কি খাবার খায়?
শেষ কথা
আশা করি আমরা আপনাকে,কোন কোন পাখি মানুষের মতো কথা বলতে পারে এ সম্পর্কে পূর্ণাঙ্গ ধারণা দিতে পেরেছি। তবে যদি এই পোস্টটি সম্পর্কে আপনার কোন মতামত থাকে তাহলে অবশ্যই কমেন্ট করে আমাদের জানাবেন।