পৃথিবীতে এমন কয়েক ধরনের প্রজাতির পাখি রয়েছে যারা পাখি হওয়া সত্ত্বেও আকাশে উড়তে পারেনা। কোন পাখি গুলো উড়তে পারে না আপনি জানেন কি? না জানলেও অসুবিধা নেই । কারণ আজকের এই আলোচনায় আজ আমরা “কোন পাখি গুলো উড়তে পারে না” এই সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করবো।
কোন পাখি গুলো উড়তে পারে না?
কালের বিবর্তনে কিছু পাখি তাদের উড়ার ক্ষমতা হারিয়েছে আবার কিছু পাখি সেই সৃষ্টির থেকেই উড়তে পারেন। বর্তমান পৃথিবীতে প্রায় ৭ প্রজাতির পাখি রয়েছে সেসকল পাখির উদ্দয়ন ক্ষমতা নেই বললেই চলে।
এ সকল পাখির মধ্যে রয়েছে:
- ওয়েকা
- এমু
- ক্যাসোওয়ারিস
- উটপাখি
- পেঙ্গুইন
- কিউই
নিম্নে এ সকল পাখি সম্পর্কে বিস্তারিত আকারে আলোচনা করা হয়েছে।
ওয়েকা পাখি
“কোন পাখি গুলো উড়তে পারে না” তালিকায় প্রথমেই রয়েছে ওয়েকা পাখি। নিউজিল্যান্ডের স্থানীয় একটি বড় পাখির নাম ওয়েকা। ওয়েকা পাখি উড়তে পারে না। ওয়েকা পাখি দেখতে প্রায় মুরগির মতো কিন্তু ওয়েকা পাখি মুরগি নয়। এই পাখি গুলি রেল পরিবারের সদস্য ও পাখিটি কাঠের মুরগি বা মাওরি মুরগি নামে বেশ পরিচিত।
ওয়েকা পাখি বাদামি রঙের পাখি। ওয়েকা পাখি বিশেষ করে নিউজিল্যান্ডের উপকূলীয় অঞ্চলে, বনভূমি ও তৃণভূমি অঞ্চলের বেশি পাওয়া যায়। ওয়েকা পাখি সর্বভুক পাখি। এই পাখিগুলো ফল কীটপতঙ্গ খেয়ে থাকে। বিশেষজ্ঞদের কাছে ওয়েকা পাখি খুবই সাহসী পাখি ও কৌতূহলী পাখি। কিন্তু বর্তমানে এই পাখি বিপন্ন পাখি হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
এমু পাখি
পাখি তালিকায় দ্বিতীয় তালিকায় রয়েছে এমু পাখি। উটপাখির পরে পৃথিবীর বৃহওম দ্বিতীয় বড় পাখির তালিকায় রয়েছে এমু পাখি। এমু পাখি পাখি হওয়া সও্বেও উড়তে পারে না। পাখিটি এশীয় অঞ্চলে পাওয়া যায় না। পাখিটি অস্ট্রেলিয়ার স্থানীয় পাখি।
এমু পাখি লম্বা, নরম বাদামি পালকে আবৃত, ডানা ছোট ও লম্বা শক্তিশালী দুটি পা রয়েছে। উট পাখির পর বিশ্বের দ্বিতীয় দৌড়বিদ পাখি হিসেবে এমু পাখির নাম, পাখিটি প্রতিঘন্টায় ৫০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে পারে। এমু পাখি সর্বভুক প্রাণী। এমু পাখি তার থেকে ছোট আকারে প্রাণীকে খাবার হিসেবে গ্রহণ করে ও ফল, উদ্ভিদ খাবার হিসেবে গ্রহণ করে। এমু পাখি সম্পর্কে বেশ আকর্ষণীয় তথ্য রয়েছে।
সেসকল তথ্য হচ্ছে:
- এমু পাখি ৩ মাস পর্যন্ত পানি না খেয়ে বাঁচতে পারে।
- এমু পাখির গড় আয় ১০ বছর থেকে ২০ বছর।
- এমু পাখি আকারে প্রায় ছয় ফুট লম্বা হতে পারে ও ওজন প্রায় ৭৫ কেজি পর্যন্ত হয়।
ক্যাসোওয়ারিস পাখি
“কোন পাখি গুলো উড়তে পারে না” পাখি তালিকায় তৃতীয় তালিকায় রয়েছে ক্যাসোওয়ারিস পাখি। পাপুয়া নিউগিনি অঞ্চলে বসবাস করা বিখ্যাত একটি পাখির নাম ক্যাসোওয়ারিস। পাখিটি উড়তে পারে না তবে পাখিটি বিখ্যাত তার ভয় দেখানোর কৌশলের জন্য।
শত্রু কিংবা শিকারী পশু দেখলেই এই পাখি কর্কশ কণ্ঠে বিকট শব্দ করে। এই শব্দের কারণে অন্য পাখি,শত্রু ও শিকারি প্রাণী বেশিক্ষণ তাদের নিকট থাকতে পারে না। তবে এদের রয়েছে ৪ ইঞ্চির ধারালো নখ, এই নক দিয়ে সহজেই শত্রুকে পরাজিত করতে পারে পাখিটি।
আরও পড়ুনঃ কাকাতুয়া পাখি পালন করার সঠিক পদ্ধতি কি?
ক্যাসোওয়ারিস পাখিটির আকার ২০ ইঞ্চি থেকে ৬০ ইঞ্চি ও ওজনের দিক থেকে প্রায় ১৫ কেজি থেকে ৭০ কেজি পর্যন্ত হয়ে থাকে। হ্যাঁ পাখিটির পালক নরম ও বাদামি রঙের হয়। পাখিটির ডানা ছোট হওয়াতে পাখিটি উড়তে পারে না। এছাড়া পাখিটি রয়েছে ধারালো ঠোঁট যা খাবার খেতে এমনকি শিকারি থেকে রক্ষা করতে সাহায্য করে। বর্তমানে পৃথিবীতে ক্যাসোওয়ারিস এর চারটি প্রজাতি রয়েছে।
- সাধারণ ক্যাসোওয়ারিসঃ প্রজাতিটি ক্যাসোওয়ারিস পাখির সবচেয়ে বড় ক্যাসোওয়ারিস পাখির প্রজাতি।
- উওরের ক্যাসোওয়ারিসঃ এই প্রজাতি নিউ গিনির স্থানীয় পাখি।
- সাউথ ক্যাসোওয়ারিসঃ এই প্রজাতি অস্ট্রেলিয়ার স্থানীয় ক্যাসোওয়ারিস পাখি।
- ড্রাফ ক্যাসোওয়ারিসঃ ক্যাসোওয়ারিস পাখির প্রজাতির সবচেয়ে ছোট প্রজাতি।
ক্যাসোওয়ারিস পাখি সামাজিকতার দিক থেকে একা থাকতে ভালোবাসে তবে প্রজননের ঋতুর সময় তারা জোড়ায় থাকে এবং স্ত্রী ক্যাসোওয়ারিস তিনটি থেকে পাঁচটি ডিম পেরে থাকে ও পুরুষ ক্যাসোওয়ারিস ডিমে তা দিয়ে থাকে।
বর্তমানে বন উজারের কারণে,ক্যাসোওয়ারিস শিকারের কারণে ও গাড়ি দুর্ঘটনার কারণে ক্যাসোওয়ারিস পাখির সংখ্যা প্রতিনিয়ত কমে আসছে। পাখিটি সংরক্ষণের জন্য অস্ট্রেলিয়া ও নিউ গিনিতে পাখিটিকে আইনিভাবে সুরক্ষিত করা হয়েছে।
উটপাখি
“কোন পাখি গুলো উড়তে পারে না” পাখি তালিকায় চতুর্থ তালিকায় রয়েছে উটপাখি । উটপাখিপৃথিবীর সবচেয়ে বড় পাখি ও উটপাখি উড়তে পারে না কিন্তু খুব দ্রুত দৌড়াতে পারে । এছাড়া উটপাখিকে সব পাখির সর্দার বলা হয়। উট পাখির ডিম পৃথিবীর বৃহত্তম বড় ডিম (আকারের দিক থেকে ডিমের আকার পাঁচ ইঞ্চি ও ওজন প্রায় ১.৫ কেজি)।
উটপাখি তার শক্ত পায়ের সাহায্যে বেশ দ্রুত দৌড়াতে পারে এই পাখিটিঘন্টায় প্রায় ৭৩ কিলোমিটার পথ খুব সহজেই পাড়ি দিতে পারে। ভূচর পাখিদের মধ্যে এই পাখিটি বিশ্বের এক হচ্ছে দ্রুততম পাখি। উটপাখি দলবদ্ধভাবে বসবাস করতে ভালোবাসে ও প্রতি দলে ৫টি উটপাখি থেকে ৫০টি উঠপাখি থাকে। সাধারণত এশিয়া ও অন্যান্য মহাদেশে
উট পাখি না পাওয়া গেলেও আফ্রিকা মহাদেশে প্রচুর পরিমাণে উটপাখি পাওয়া যায়।
পেঙ্গুইন পাখি
“কোন পাখি গুলো উড়তে পারে না” পাখি তালিকায় পঞ্চম তালিকায় রয়েছে পেঙ্গুইন পাখি। সাঁতার কাটা পাখির নাম বললেই শুরুতে যে নামটি আসে সেটি হচ্ছে পেঙ্গুইন। বর্তমানে পৃথিবীতে প্রায় ১৮টি প্রজাতির পেঙ্গুইন রয়েছে তবে চাঞ্চল্যকর বিষয় হচ্ছে এই ১৮টি প্রজাতির কোন প্রজাতির পেঙ্গুইন উড়তে পারে না।
পেঙ্গুইন পাখির দুর্দান্ত সাঁতারু। পাখিটির পাখা নেই বললেই চলে পাখিটির ডানা ছোট, সমতল ও শক্ত।পেঙ্গুইন পাখি তার জীবনের বড় একটা সময় সাঁতার কেটে অতিবাহিত করে। পেঙ্গুন পাখি দক্ষিণ গোলার্ধ বসবাস না করা একটি পাখি ও পেঙ্গুইন পাখি উত্তর গোলার্ধে বসবাস করে।
আকারের দিক থেকে পেঙ্গুইন পাখি প্রায় ১১০ সেন্টিমিটার পর্যন্ত লম্বা হয়ে থাকে ও ওজনের দিক থেকে প্রায় ৪০ কেজি ওজন হয়ে থাকে। পেঙ্গুইনের জলরোধী ছোট ছোট পালকে ঢাকা থাকে ও অধিকাংশ পেঙ্গুইন পাখির প্রজাতির পেট কালো এবং পেট সাদা হয়। পেঙ্গুইন পাখি সামুদ্রিক প্রাণী খাবার হিসেবে গ্রহণ করে থাকে। পেঙ্গুইন পাখি একবারে দুইটি ডিম পেড়ে থাকে ও স্ত্রী-পুরুষ উভয়ে মিলে ডিমে তা দিয়ে থাকে।
পেঙ্গুইন পাখি সম্পর্কে কিছু আকর্ষণীয় তথ্য হচ্ছে:
- পেঙ্গুইন পাখি প্রতিঘন্টায় ৬০ কিলোমিটার সাঁতার কাটতে পারে।
- পেঙ্গুইন পাখি বরফের উপর 40 কিলোমিটার হেঁটে যেতে পারে।
- পেঙ্গুইন একমাত্র পাখি যারা হাঁটতে পারে ও পানিতে সাঁতার কাটতে পারে।
- পেঙ্গুইন -৪০° সেলসিয়াস তাপমাত্রায় টিকে থাকতে পারে।
কিউই পাখি
পৃথিবীর তীক্ষ্ণ ঘ্রাণ শক্তি ও শ্রবণ শক্তির পাখির কথা যদি বলা হয় তাহলে কিউই পাখির নাম প্রথম তালিকায়। পাখিটি আকারে প্রায় ২৫ ইঞ্চি লম্বা হয়ে থাকে ওজনের দিক থেকে প্রায় দুই কেজি। কিউই নিউজিল্যান্ডের স্থানীয় একটি পাখি। কেউই পাখির ডিম তাদের দেহের তুলনায় বিচারের দিক থেকে বিশ্বরেকর্ড করেছে, যদিও কিউই পাখির ডিম ছোট।
কেন এই পাখি গুলো উড়তে পারেনা?
পাখির দেহের হাঁড় ফাঁপা ও বায়ু দ্বারা পূর্ণ থাকে, এ কারণে পাখি সহজেই আকাশে উড়তে পারে। কিন্তু উপরে যে-সকল পাখির কথা বলা হয়েছে সেসকল পাখির হাঁড় ফাঁপা ও বায়ু দ্বারা পূর্ণ নয়। এ সকল পাখির দেহের তুলনায় ওজন থেকে বেশি, ডানার আকার ছোট ও বেশ কিছু বৈশিষ্ট্যের কারণে পাখি উড়তে পারেনা।
এছাড়া বিবর্তনের কারণে পাখি উড়তে পাড়ার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে। বিবর্তনবাদ অনুসারে,যে সকল এলাকায় পাখি হেঁটে হেঁটে খুব সহজে খাবার করতে সহজ বোধ করতো সেসকল এলাকায় তারা উড়ে চলাফেরা করতো না। উড়ে চলাফেরা না করার কারণে পাখির ডানার ব্যবহার বন্ধ হওয়ায় ধীরে ধীরে বেশ কিছু প্রজাতির পাখি তাদের ক্ষমতা হারিয়েছে।
শেষ কথা
আশা করি আমরা আপনাকে কোন পাখি গুলো উড়তে পারে না এ সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানাতে পেরেছি। যদি আপনার এই সম্পর্কে কোন প্রশ্ন থেকে থাকে তাহলে অবশ্যই আপনি কমেন্ট করে আমাদের জানাতে পারেন।