টিয়া পাখি পালন পদ্ধতি সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য আমরা প্রায়শই অনলাইনে অনুসন্ধান করে থাকি। তবে অনুসন্ধানের ফলাফল স্বরূপ টিয়া পাখির সম্পর্কে পূর্ণা-ঙ্গ তথ্য আজ আমরা এই পোষ্টে আলোচনা করবো। তাহলে দেরি না করে মূল আলোচনাটি শুরু করা যাক।
টিয়া পাখি বিশেষ করে পৃথিবীর উষ্ণ ও নিরক্ষীয় অঞ্চলে সবচেয়ে বেশি দেখা যায়। টিয়া পাখি মানব বসতির কাছাকাছি বড় গাছে বাসা বেধে থাকে। বাংলাদেশে প্রচুর পরিমাণে টিয়া পাখি পাওয়া যায়। তবে বাংলাদেশে পাওয়া টিয়া পাখির অধিকাংশ সবুজ রঙের টিয়া পাখি।
তবে আপনি জেনে অবাক হবেন যে জীববিজ্ঞানীদের কাছে টিয়া পাখি “সিট্টাসিনি” নামে পরিচিত। আর এই সিট্টাসিনি নানা রকমের হয়ে থাকে এবং বিজ্ঞানীরা সিট্টাসিনিকে ৩৭২ টি প্রজাতিতে বিন্যস্ত করেছেন। এবার তবে টিয়া পাখির বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।
টিয়া পাখির বৈশিষ্ট্য
টিয়া পাখি পালন পদ্ধতি সম্পর্কে জেনে নেওয়ার আগে অবশ্যই টিয়া পাখির বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে জেনে নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ। টিয়া পাখির বৈশিষ্ট্য দুই ভাগে বিভক্ত করা যায়।
যেমন: (১) শারীরিক বৈশিষ্ট্য ও (২) আচরণগত বৈশিষ্ট্য।
নিন্মে টিয়া পাখির শারীরিক বৈশিষ্ট্য ও আচরণ উপস্থাপন করা হয়েছে বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে উপস্থাপন করা হয়েছে।
শারীরিক বৈশিষ্ট্য | আচরণগত বৈশিষ্ট্য |
১) টিয়া পাখির আকার দৈর্ঘ্য হিসেবে প্রায় ৪২ সেন্টিমিটার ও লেজ ২৭ সেন্টিমিটার হয়ে থাকে। | ১) টিয়া পাখিকে সামাজিক পাখি হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। টিয়া পাখি দলগত-ভাবে বসবাস করতে ভালোবাসে। |
২) টিয়া পাখির ওজন ৯৫ গ্রাম থেকে প্রায় ১৪০ গ্রাম পর্যন্ত হয়ে থাকে। তবে টিয়া পাখির ওজন নির্ভর করে টিয়া পাখির প্রজাতির উপর ভিত্তি করে। | ২) টিয়া পাখি সাধারণত মানব বসতির কাছাকাছি স্থানে বড় গাছে বাসা তৈরি করে থাক। |
৩) টিয়া পাখির লেজ সরু ও লম্বা হওয়াতে টিয়া পাখির ভারসাম্য বজায় রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। | ৩) টিয়া পাখি মানুষের কথা অনুকরণ করতে পারে। |
টিয়া পাখি পালন পদ্ধতি
আমরা অনেকেই টিয়া পাখি পালন করতে চাই তবে টিয়া পাখি পালন পদ্ধতি সম্পর্কে বিস্তারিত না জানার কারণে আমাদের টিয়া পাখি পালনে নানা ধরনের সমস্যা হয়। টিয়া পাখির পালন করতে হলে সাধারণত বাচ্চা টিয়া পাখি পালন করা উচিত। সাধারণত টিয়া পাখির বাচ্চার বয়স যখন ৪৫ দিন থেকে ৬০ দিন হয়ে থাকে তখন টিয়া পাখির বাচ্চা পালনের যোগ্য হয়।
সাধারণত এই বয়সে টিয়া পাখিকে এক খাঁচায় রেখে পালন করা যায় না, কারণ এই বয়সে টিয়া পাখির বাচ্চা তাদের মা-বাবার বাসাতে থাকে। তাই এ বয়সের টিয়া পাখিকে পালনের জন্য আলাদাভাবে পাখিকে এর যত্ন করতে হবে।
নিন্মে টিয়া পাখি পালন পদ্ধতি সম্পর্কে উপস্থাপন করা হলো:
- টিয়া পাখির বয়স যখন ২ মাস হয় তখন থেকে টিয়া পাখি পালন করা যায়। তবে আপনি যদি একটু বেশি বয়সের টিয়া পাখি পালন করতে চান তাহলে ৭ মাস থেকে ৮ মাস বয়সের টিয়া পাখি পালন করতে পারেন।এক্ষেত্রে একটু বেশি বয়সে টিয়াপাখি পালন করা একটু কঠিন হয়ে থাকে।
- টিয়া পাখিকে সব সময় খাঁচায় না রেখে আমার বদ্ধ ঘরের মধ্যে উড়তে দিন।
- টিয়া পাখি সাধারণত কাঠ ঠোকরাতে বেশি পছন্দ করে থাকে। এক্ষেত্রে আপনি টিয়া পাখির খাঁচায় একটি ছোট গাছের ডাল রাখুন ও কিছুদিন পর পর পরিবর্তন করুন।
- টিয়া পাখি তার মালিকের কাছে থাকতে পছন্দ করে। সেক্ষেত্রে আপনি যতটা পারবেন টিয়া পাখির কাছাকাছি থাকুন।
- টিয়া পাখির খাবার তালিকার কথা যদি বলা হয় তাহলে টিয়া পাখি সবচেয়ে বেশি পছন্দ করেই সে খাবারটি হচ্ছে বীজ জাতীয় খাবার।
- টিয়া পাখিকে অতিরিক্ত রোধ ও বৃষ্টির পানি থেকে দূরে সরিয়ে রাখতে হবে।
- বিড়াল, ইঁদুর, কাক, মশা থেকে দূরে রাখতে হবে টিয়া পাখিকে।
- টিয়া পাখির ট্রে সপ্তাহে একদিন পরিষ্কার করবেন।
- টিয়া পাখিকে আলো বাতাস পূর্ণ একটি সুন্দর জায়গায় রাখুন।
- টিয়া পাখিকে গ্রীষ্মকালে সপ্তাহে দুই থেকে তিন দিন বড় একটি গামলা বা বড় বাটিতে পরিমাণ মতো পানি দিতে হবে গোসল করার জন্য। তবে শীতকালে সপ্তাহে একদিন দিলে ভালো হয়। তবে অত্যাধিক সময় টিয়া পাখি যেন পানিতে না থাকে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
টিয়া পাখি পালন করা অত্যন্ত সহজ যদি আপনি আপনার পোষা টিয়া পাখিকে পর্যাপ্ত পরিমাণে সময় দিতে পারেন। প্রথম অবস্থায় আপনি টিয়া পাখিকে কয়েকদিন খাচায় রাখলেও পরবর্তীতে টিয়া পাখিকে আপনার রুমের মধ্যে মুক্ত করে দিন ও টিয়াপাখি পোষ মেনে গেলে টিয়া পাখিকে নিয়ে আপনি বাইরে ঘুরতে বের হবেন। এতে আপনার সাথে টিয়া পাখির বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক খাঁচায় দৃঢ় হবে। টিয়া পাখি পালন পদ্ধতি তো জানলেন এবার তবে টিয়া পাখির প্রজনন কাল সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।
টিয়া পাখির প্রজনন কাল
টিয়া পাখির প্রজনন কাল জানুয়ারি মাস থেকে জুলাই মাস পর্যন্ত হয়ে থাকে। এই ৭ মাসকে টিয়া পাখির প্রজনন মৌসুম হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। তবে টিয়া পাখির এই প্রজনন মৌসুম কেবলমাত্র সবুজ টিয়ার জন্য। অন্য সকল টিয়া পাখি ডিসেম্বর মাস থেকে জুন মাসের মধ্যে ডিম পেড়ে থাকে। টিয়া পাখি সাধারণত একসাথে ৩টি ডিম থেকে ১২টি ডিম পর্যন্ত পেড়ে থাকে। আর এই ডিম থেকে বাচ্চা বের হতে ১৮ থেকে ২৪ দিন সময়ের প্রয়োজন হয়।
টিয়া পাখির বাসার ধরন
টিয়া পাখিকে সামাজিক পাখি বলা হয় কেননা টিয়া পাখি মানব বসতির কাছাকাছি বসবাস করে থাকে। আর বাংলাদেশে প্রাকৃতিক-ভাবে টিয়া পাখির সবচেয়ে বেশি দেখা যায় পার্বত্য অঞ্চলে। টিয়া পাখি মানব বসতির কাছে বড় গাছের উপরে বাসা তৈরি করে বসবাস করে থাকে। টিয়া পাখির ঠোঁট অত্যন্ত শক্ত হবার কারণে টিয়া পাখি বড় গাছে কোটর তৈরি করে বসবাস করে।
টিয়া পাখির শারীরিক গঠন
প্রজাতি ভেদে টিয়া পাখির শারীরিক গঠনে বেশ কিছু পার্থক্য দেখা যায়। তবে বাংলাদেশে যে টিয়া পাখিটি পাওয়া যায় সেটি হচ্ছে সবুজ টিয়া পাখি। আর সবুজ টিয়া পাখির ওজন ১৩০ গ্রাম হয়ে থাকে, যা দেহের দৈর্ঘ্যের দিক থেকে ৪২ সেন্টিমিটার। আর টিয়া পাখির সামান্য কিছু পালক ছাড়াই সম্পূর্ণ শরীর সবুজ। টিয়া পাখির ঠোঁট লাল হয়ে থাকে ও টিয়া পাখির ঠোঁট দেখতে অনেকটা নিচের দিকে বর্ষীর মতো বাঁকানো। টিয়া পাখির চোখের রং হলদে সাদা হয়ে থাকে। টিয়া পাখির লেজ সরু ও লম্বা হয়ে থাকে। যা দেহের ভারসাম্য বজায় রাখে। টিয়া পাখির পাখা খুবই শক্তিশালী যা পাখিকে উড়তে সাহায্য করে থাকে।
টিয়া পাখির উপকারিতা
টিয়া পাখিকে সৌভাগ্যের প্রতীক হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এক্ষেত্রে অনেকেই বাড়িতে টিয়া পাখি পোষ মানিয়ে থাকেন। অনেকের ধারণা আছে টিয়া পাখি ঘরে রাখলে বিভিন্ন রোগের ঝুঁকি কমে যায়। তাছাড়া টিয়া পাখি পালনে অর্থনৈতিক সুবিধা রয়েছে। টিয়া পাখি পালন করে অর্থনৈতিক দিক থেকে লাভবান হওয়া যায়।
টিয়া পাখি কি কথা বলতে পারে?
হ্যাঁ, টিয়া পাখি কথা বলতে পারে। টিয়া পাখির শ্বাস-প্রশ্বাসের সময় শ্বাসনালীর পেশিগুলি প্রয়োজন অনুযায়ী সংকুচিত ও প্রসারিত হয়ে মানুষের শব্দ সৃষ্টি করে। এছাড়া টিয়া পাখি কথা বলার সময় নিজেদের ফ্লেক্সিবল টাং এবং ঠোঁট ব্যবহার করে থাকে। কখনো কখনো টিয়া পাখি খেয়ে কথা বলার সময় খানিকটা মাথা বাঁকা করতেও দেখা যায়।
বিজ্ঞানীদের মতে টিয়া পাখির মস্তিষ্ক অন্য পাখির মস্তিষ্কের চেয়ে অনেকটা আলাদা। টিয়া পাখি মানুষের ভাষা বুঝতে পারে ও সে অনুযায়ী কথা বলতে পারে। টিয়া পাখির মস্তিষ্কের ধারণ ক্ষমতা অন্য পাখির চেয়ে অনেকটা বেশি হয়ে থাকে। তবে এ টিয়া পাখিকে এ কথা বলার জন্য অবশ্যই মানুষের সাথে থাকতে হয়।
টিয়া পাখির বাচ্চা কোথায় পাওয়া যায়
বাংলাদেশে ৬৪ টি জেলার প্রত্যেকটি জেলার পাখির খামারে টিয়া পাখির বাচ্চা পাওয়া যায়। তবে বিশেষ করে বিভাগীয় শহর গুলোতে পাখির খামারে প্রয়োজন অনুযায়ী সকল বয়সের টিয়া পাখি পাওয়া যায়। এছাড়া বর্তমানে অনলাইনে বেশ কিছু গ্রুপ তৈরি হয়েছে। সেখান থেকে আপনি পাখির মালিকের সাথে কথা বলে টিয়া পাখি ক্রয় করতে পারবেন।
টিয়া পাখি কমে যাওয়ার কারণ
বর্তমানে পূর্বের তুলনায় বাংলাদেশে টিয়া পাখি তুলনামূলক-ভাবে কম দেখা যাচ্ছে। আর এর প্রধান কারণ হচ্ছে আমাদের মধ্যে অসচেতনতা ও জলবায়ু পরিবর্তন। বর্তমানে মানুষ বিশেষ করে তাদের আশেপাশের পার্শ্ববর্তী বনাঞ্চল ধ্বংস করছে। যার ফলে এখানে বসবাসকারী টিয়া পাখি অন্যত্র চলে যাচ্ছে ও প্রজনন কালে ব্যাঘাত ঘটার কারণে পাখির সংখ্যা তুলনামূলক-ভাবে কমে আসছে।
শেষ কথা
আপনি যদি টিয়া পাখির পালন পদ্ধতি সম্পর্কে না জেনে থাকেন তাহলে আপনার টিয়া পাখি পালন করা উচিত নয়। তবে আশা করি আমরা আপনাকে টিয়া পাখির পালন পদ্ধতি সম্পর্কে বিস্তারিত জানাতে পেরেছি।