ঘুঘু পাখি পালন পদ্ধতি সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ঘুঘু পাখি পালন পদ্ধতি সম্পর্কে না জানলে ঘুঘু পাখি পালন করা সম্ভব নয়। সেহেতু আজ আমরা এই পোস্টটিতে ঘুঘু পাখি পালন পদ্ধতি ও ঘুঘু পাখি সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য আলোচনা করব। তবে প্রথমে এ ঘুঘু পাখি সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।
ঘুঘু পাখি সম্পর্কে প্রাথমিক তথ্য
ঘুঘু পাখির পালন পদ্ধতি সম্পর্কে জানার আগে ঘুঘু পাখি সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেওয়া অনেক গুরুত্বপূর্ণ। ঘুঘু পাখি বাংলাদেশের অতি পরিচিত একটি পায়রা জাতের পাখি।
বৈজ্ঞানিক তথ্য অনুযায়ী পাখিটি “কলাম্বিডি” পরিবারের স্ট্রেপ্টোপেলিয়া গণের অন্তর্গত একটি পাখি। তবে ঘুঘু পাখি শহর অঞ্চলে দেখা যায় না। গ্রামাঞ্চলে ঘুঘু পাখি বেশি দেখা যায়। ঘুঘু পাখি ভারত,বাংলাদেশ ছাড়াও দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার কয়েকটি দেশে বসবাস করে থাকে।
এ পর্যন্ত পৃথিবীতে ৩৬ টি প্রজাতির ঘুঘু পাখির সন্ধান পাওয়া গিয়েছে। তবে আমাদের দেশে অর্থাৎ বাংলাদেশে মাত্র ৬টি প্রজাতির ঘুঘু পাখি পাওয়া যায়। ঘুঘু পাখি সম্পর্কে তো জানতে পেরেছেন এবার আসুন ঘুঘু পাখির বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।
ঘুঘু পাখির বৈশিষ্ট্য
ঘুঘু পাখির বেশ কয়েকটি বৈশিষ্ট্য রয়েছে যার জন্য পাখিটি অন্য পাখি থেকে পৃথক। নিম্নে ঘুঘু পাখির বৈশিষ্ট্য উপস্থাপন করা হয়েছে:
- ঘুঘু পাখি আকারে প্রায় ২৫ সেন্টিমিটার থেকে ৩০ সেন্টিমিটার পর্যন্ত হয়ে থাকে। তবে প্রজাতি ভেদে ঘুঘু পাখির আকার কম বেশি হতে পারে।
- ঘুঘু পাখির শারীরিক ওজন ১২৫ গ্রাম থেকে ১৪০ গ্রাম পর্যন্ত হয়ে থাকে।
- ঘুঘু পাখি নীচু ঝোপঝাড়ে বাসা তৈরি করে বসবাস করতে ভালোবাসে।
- ঘুঘু পাখির বয়স ৬ মাস হওয়া মাত্রই ঘুঘু পাখি ডিম পাড়া শুরু করে থাকে।
ঘুঘু পাখির বৈশিষ্ট্য তো জানতে পেরেছেন এবার আসুন ঘুঘু পাখি পালন পদ্ধতি সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জেনে নেওয়া যাক।
ঘুঘু পাখি পালন পদ্ধতি
ঘুঘু পাখির পালন পদ্ধতি বেশ সহজ ও খরচ খুব কম। নিন্মে ঘুঘু পাখি পালন পদ্ধতি নিম্নে করা হলো:
- প্রথমত ঘুঘু পাখির জন্য প্রয়োজন বড় মাপের খাঁচা। বড় মাপের খাঁচায় পাখি এই সহজে উড়তে পারে। এজন্য আপনি ১৮ ইঞ্চি-২৪ ইঞ্চি-১৮ ইঞ্চি কিংবা ২০ ইঞ্চি-২৪ ইঞ্চি-২০ ইঞ্চি আকারের খাঁচা তৈরি করতে পারেন। তবে আপনি কবুতর পালনের খাঁচা ব্যবহার করতে পারেন।
- ঘুঘু পাখির খাঁচা খুবই পরিষ্কার হওয়া উচিত। কারণ অপরিষ্কার খাঁচার কারণে ঘুঘু পাখি অসুস্থ হয়ে পড়ে। এক্ষেত্রে সপ্তাহে অন্তত একদিন বা দুইদিন ঘুঘু পাখির খাঁচা পরিষ্কার করতে হবে।
- ঘুঘু পাখি খাঁচায় অবশ্যই একটি ডাল রাখতে হবে। আমাদের মধ্যে অনেকেই ঘুঘু পাখির খাঁচায় রড বা পাইপ ব্যবহার করে থাকেন। রড বা পাইপ মসৃণ হওয়ার কারণে ঘুঘু পাখির ভারসাম্য রাখতে সমস্যা হয়। এক্ষেত্রে পেয়ারা বা নিম গাছের ডাল ব্যবহার করতে হবে।
- ঘুঘু পাখি নিস্তব্ধ পরিবেশ পছন্দ করে। সেক্ষেত্রে ঘুঘুকে নিস্তব্ধ এমন জায়গায় রাখুন যেখানে নিস্তব্ধ পরিবেশ। এছাড়া ঘুঘু পাখিকে ইঁদুর,বিড়াল,কুকুর, কাক এর থেকে দূরে রাখতে হবে।
- ঘুঘু পাখির বাসার জন্য আপনি বাজার থেকে মাটি হাড়ি, খাবারের পাএ ও পানির পাএ নিয়ে আসবেন।
- ঘুঘু পাখিকে সপ্তাহে অন্তত একদিন গোসল করাবেন। আর সেক্ষেত্রে আপনি গোসল করার জন্য একটি গামলায় পানি দিয়ে খাঁচার মধ্যে দিতে পারেন। যদি ঘুঘু পাখি নিজে গোসল না করে সে ক্ষেত্রে স্প্রে দিয়ে ঘুঘু পাখিকে গোসল করাতে হবে। তবে খেয়াল রাখবেন যে ঘুঘু পাখির নাকে ও কানে পানি না প্রবেশ করে।
- ঘুঘু পাখি প্রচুর পানি পান করে থাকে সেক্ষেত্রে খাঁচার মধ্যে পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি রাখতে হবে। আর ঘুঘু পাখিকে নিয়মিত খাবার প্রদান করতে হবে। ঘুঘু পাখি ধান, গম, ভুট্টা খাবার হিসেবে গ্রহণ করে থাকে।
পরিশেষে একটা কথাই বলব যে,আপনি যদি ঘুঘু পাখি পোষ মানাতে চান বা পালন করতে চান সে ক্ষেত্রে আপনাকে ঘুঘু পাখিকে পর্যাপ্ত পরিমাণে যত্ন করতে হবে।
ঘুঘু পাখির জাত
পাখির জাত বলতে আমরা পাখির প্রজাতিকে নির্দেশ করে থাকি। আর সারা বিশ্বে এ পর্যন্ত ৩৬ প্রজাতির ঘুঘু পাখি পাওয়া গিয়েছে। তবে বাংলাদেশে এই ৩৬ টি প্রজাতির মাত্র ৬টি প্রজাতির ঘুঘু পাখি দেখা যায়। তবে বর্তমানে বেশ কিছু বিদেশি ঘুঘু পাখি পালনের জন্য বাংলাদেশে ঘুঘু পাখির প্রজাতির সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে।
ঘুঘু পাখি কি পোষ মানে
হ্যাঁ, ঘুঘু পাখি পোষ মানে। কবুতর পাখির ন্যায় ঘুঘু পাখি পালন করা খুবই সহজ ও লাভজনক।
ঘুঘু পাখি ডিম পাড়ার লক্ষণ
ঘুঘু পাখির ডিম পাড়ার বেশ কিছু লক্ষণ রয়েছে। আপনি যদি আপনি যদি আপনার পালন করা ঘুঘু পাখির মধ্যে এ সকল লক্ষণ দেখতে পান তাহলে আপনাকে বুঝে নিতে হবে আপনার পালন করা ঘুঘু পাখি দ্রুত ডিম দিবে।
নিচে কিছু লক্ষণ উপস্থাপন করা হয়েছে:
- প্রজননের সময় পুরুষ ঘুঘু পাখি তুলনামূলক ভাবে বেশি ডেকে থাকে ও ডাকের সাড়া দিয়ে মহিলা ঘুঘু পাখি কাছে বসে।
- ডিম পাড়ার আগে পুরুষ ও মহিলা ঘুঘু পাখি বেশি কাছাকাছি অবস্থান করে।
- ডিম পাড়ার আগে ঘুঘু পাখি বাসা পরিষ্কার করে।
ঘুঘু পাখি বছরে কতবার ডিম দেয়
এক জোড়া ঘুঘু পাখি বছরে ৩ বার ডিম পেয়ে থাকে। তবে এ ঘুঘু পাখির বয়স যখন ৬ মাস থেকে ৮ মাস হয় তখন ঘুঘু পাখি ডিম পাড়া শুরু করে। ঘুঘু পাখি একসাথে ২টি করে ডিম পেড়ে থাকে।
ঘুঘু পাখির ডিম কত দিনে ফোটে
ঘুঘু পাখির ডিম থেকে বাচ্চা বের হতে প্রায় ১২ দিন থেকে ১৪ দিন সময় প্রয়োজন হয়। তবে ডিম তা দেওয়ার ক্ষেত্রে নারী ও পুরুষ ঘুঘু পাখি উভয় পালাক্রমে ডিম তা দিয়ে থাকে।
ঘুঘু পাখি নর মাদি চেনার উপায়
ঘুঘু পাখির পুরুষ না মহিলা এটি অনেকেই নির্বাচন করতে পারেন না। সাধারণত ঘুঘু পাখির বয়স ২ থেকে ৩ মাস না হলে ঘুঘু পাখি পুরুষ না মহিলা এটি নির্বাচন করা কঠিন হয়ে পড়ে। পুরুষ ঘুঘু পাখি খুব বেশি পরিমাণে ডেকে থাকে। অন্যদিকে নারী ঘুঘু পাখি খুব কম পরিমাণ ডেকে থাকে। আর ঘুঘু পাখির বয়স যদি একই হয় তাহলে পুরুষ ঘুঘু পাখি নারী ঘুঘু পাখি তুলনায় তুলনামূলক ভাবে বড় হয়ে থাকে।
ঘুঘু পাখির দাম কত ২০২৪
কবুতর পাখির মতো ঘুঘু পাখি ক্রয় বিক্রয় হয়ে থাকে। ঘুঘু পাখির প্রকারভেদের উপর ভিত্তি করে ঘুঘু পাখির দাম নির্ধারণ হয়ে থাকে। বর্তমানে একজোড়া অস্ট্রেলিয়ান ঘুঘুর দাম ১০০০ টাকা হতে ২০০০ টাকা। একজোড়া তিলা ঘুঘুর দাম ৫০০ টাকা হতে ১৫০০ টাকা হয়ে থাকে। ১২০০ টাকা হতে ২০০০ টাকায় বিক্রি হয় এক জোড়া সাদা ঘুঘু। এছাড়া একজোড়া ডায়মন্ড ঘুঘু ও সাদা ডায়মন্ড ঘুঘু ১৫০০ টাকা হতে ৩০০০ টাকা ও ২০০০ টাকা হতে ৪০০০ টাকা হয়ে থাকে।
শেষ কথা
ঘুঘু পাখি পালন পদ্ধতি খুবই সহজ যদি আপনি ঘুঘু পাখি পালন পদ্ধতি সম্পর্কে বিস্তারিত জানেন। সেহেতু আজ আমরা এই আলোচনায় আপনাকে ঘুঘু পাখি সম্পর্কে জানিয়েছি। আপনি আপনার বসত বাড়িতে ঘুঘু পাখি পালন করতে পারেন পাখির মুখরিত শব্দ বাড়িতে থাকবে। এছাড়া ঘুঘু পাখি পালন বাণিজ্যিক ভাবে খুবই লাভজনক।